মেলবোর্ন, ২৫ মে-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনের আগে সংস্কার ও গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণহানির বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার রাতে সরকার প্রধানের বাসভবন ও রাষ্ট্রৗয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে দলটি এই দাবি জানায়।
বৈঠকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ছাড়াও ছিলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে শফিকুর বলেন, “আমরা বলেছি দুইটা বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া দরকার। নির্বাচন কখন হবে? আপনি যে সময় দিয়েছেন এর ভেতরে জনগণের কোনো ধরনের ভোগান্তি না হয়ে, একটা সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
“আর দ্বিতীয় আমরা বলেছি নির্বাচনের আগে সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কারের আগে যদি নির্বাচন হয় তাহলে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।”
জামায়াতের দুই নেতা যমুনায় ঢোকেন রাত আটটার দিকে। কিছুক্ষণ পর সেখানে যান জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। রাত সোয়া ৯টার পরে বের হয়ে আসেন জামায়াত নেতারা।
এর আগে বিএনপির চার সদস্যের যে প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে, সেখানে স্থানীয় সরকার, পল্লী ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে বিএনপি এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট পথনকশাও চেয়েছে।
জামায়াত নেতার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, দুই যুগের শরিক বিএনপির এসব দাবি নিয়ে তাদের কোনো ভাবান্তর নেই।
শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে কয়েবার বলেছেন, নির্বাচন তিনি দিতে চান এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেননি, কোন মাস, সপ্তাহ তিনি ঘোষণা করেননি। এটাকে কেন্দ্র করে রোডম্যাপের ব্যাপারে একটা দাবি আছে।”
বৈঠকের প্রেক্ষাপট
গত বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত বিভিন্ন আইডি থেকে ‘নিশ্চিত’ তথ্য বলে ছড়ানো হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে চাইছেন।
পরে সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই গুঞ্জন যে সত্য, তা প্রমাণ হয়।
দুই নেতা সেই বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করতে। শুরুতে সংবাদ মাধ্যমকে দুই পক্ষ থেকেই নাম প্রকাশ না করে বক্তব্য দেওয়া হয়। পরে বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলামই নিজেই বলেন সব কিছু।
পরে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা নিজেরাও এ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন। সেই বৈঠকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা কিছু এসেছে। কিন্তু কোন বিষয়ে সরকার কাজ করতে পারছে না, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।
সেদিন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। শনিবার সরকার প্রধান এই ডাকে সাড়া দেন। রবিবার বিভিন্ন দলকে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলাদা বৈঠকের বিষয়টি ঠিক হয় সকালেই। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপির সঙ্গে এবং রাত সাড়ে ৮টায় জামায়াত ইসলামীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় এনসিপির পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদেরকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা তাদের দলকেও আলোচনার জন্য ডেকেছেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় যাবে।