মেলবোর্ন, ০৫ জুন— ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল করার যে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তা প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান।
বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব আমাদের দেশের শতভাগ স্বার্থবিরোধী।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সঙ্গে কয়েক দফার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মূল এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন খামেনি।
ওমানের মধ্যস্থতায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ও যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের আলোচনার পর গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেহরানকে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়।
পাঁচ দফা আলোচনা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের মাঝে এখনও কয়েকটি গুরুতর অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। এর মধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা এবং তেহরানের মজুদকৃত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম বিদেশে পাঠাতে একেবারে অস্বীকৃতি জানানোর মতো বিষয়গুলো অন্যতম।
ইরানে রাষ্ট্রীয় যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রয়েছে খামেনির। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির আলোচনার ইতি টানার কথা না বললেও ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ‘‘এই প্রস্তাব আমাদের জাতীয় আত্মবিশ্বাস ও ‘আমরাও পারি’ নীতির পরিপন্থী।”
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি, আর শত্রুরা এটাকেই লক্ষ্যবস্তু করছে।
“আমেরিকানদের প্রস্তাব আমাদের স্বার্থের সম্পূর্ণ-পরিপন্থী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অহংকারী। আমেরিকান নেতারা বারবার দাবি করেছে, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থাকা উচিত নয়। ইরান সমৃদ্ধকরণ করবে কি না, সেটা ঠিক করে দেওয়ার তারা কে?”
তেহরান বরাবরই বলে আসছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিগুলো বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ট্রাম্প আবারও ইরানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত চাপ প্রয়োগের কৌশলের নীতি গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও আলোচনায় সমাধান না হলে বোমা হামলার হুমকি।
ট্রাম্প প্রথম দফার শাসনামলে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এর জবাবে ইরান চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে ব্যাপক হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করা ইসরায়েল বলেছে, তারা তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাবে; যাতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে। ইসরায়েলের এই হুমকির জবাবে পাল্টা হামলার অঙ্গীকার করেছে ইরান।