মেলবোর্ন, ০৯ জুন— নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কথায় আস্থা রাখতে চাই। তিনি এরইমধ্যে বলেছেন এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন দেবেন। তিনি যেন জাতিকে দেওয়া তার ওয়াদা রক্ষা করেন। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচন রমজানের আগে হলে ভালো হয়। একান্ত কোনো কারণে নির্বাচন পেছালে সেটি অবশ্যই এপ্রিল মাস অতিক্রম করা উচিত নয়।
সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা বাজারে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, সাড়ে ১৫ বছর তারা জাতির ওপর জুলুম করল, এখনও তা অব্যাহত রেখেছে। মাঝেমধ্যে তারা দেশের সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। দেশকে তারা অস্থির করতে চায়। আড়াই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত খুন করল। এতকিছুর পরও তারা অনুশোচনা করে না, জাতির কাছে মাফ চায় না এবং লজ্জিতও হয় না।

জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, জনগণ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে; সেই ব্যবস্থা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।”
তরুণ ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দাবি জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, “নির্বাচনি শিডিউলের আগে যে সব তরুণের ভোট দেওয়ার বয়স হবে তাদের ভোটার করতে হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলবেন আর নাগরিকত্বের প্রথম অধিকার ভোট দিতে দেবেন না, এটি হবে না।”
জামায়াত আমির বলেন, “আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন বিদেশ থেকে স্বচ্ছতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি যুবকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, তোমাদের নেতৃত্বের হাত ধরে বাংলাদেশে পরিবর্তন এসেছে। সাড়ে ১৫ বছর জালিমের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ হয়েছি, প্রতিবাদ করেছি, আন্দোলন করেছি, ফ্যাসিবাদীদের আমরা বিদায় করতে পারি নাই। তোমরাই সফল হয়ছো। আমরা একটা বিশৃঙ্খল বাংলাদেশ দেখতে চাই না, মানবিক বাংলাদেশ দেখে যেতে চাই। জাতি আশা করে আগামী দিনে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তোমরা আরও সাহসী ভূমিকা রাখবে।”
জামায়াতের আমির বলেন, “সাড়ে ১৫ বছর তোমরা ভোট দিতে পারো নাই। এখনও যাদের বয়স হয় নাই কিন্তু ভোটের আগে যাদের বয়স হয়ে যাবে, সরকারের কাছে অনুরোধ; যাদের বয়স নির্বাচনের শিডিউলের আগে ১৮ বছর হয়ে যাবে তাদের ভোটাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যুবকরা লড়াই করে অধিকার ফিরিয়ে এনেছে এবং ভোটাধিকার তাদের প্রাপ্য।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘এবারের ভোটে কেউ যদি কালো ও পেশি শক্তি দেখায় তাহলে জুলাইতে যেভাবে কালো শক্তিদের বিতাড়িত করা হয়েছে ,সেই পরিণতি তাদেরও ভোগ করতে হবে। এবারের ভোটের লড়াইয়ে যুবকদের নেতৃত্ব দিতে হবে।’’
শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। এই শিক্ষা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী বানায় না। শিক্ষা অর্জনের পর ফাইল নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চাকরি পাওয়া যায় না। এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বদলে দিতে হবে।”
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রথমে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শিক্ষা অর্জন করে একজন লোকও বেকার থাকবে না।”