মেলবোর্ন, ১০ জুন— ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে। এতে করোনাভাইরাসের আরও সংক্রামক নতুন ধরন ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতে বর্তমানে ৫ হাজার ৭০০ জনের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গেছেন চারজন।
হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কম হলেও জনগণকে সতর্ক থাকার, উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানোর এবং ভিড়ের জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
থাইল্যান্ডে জুন মাসের শুরু থেকেই শত শত কোভিড রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। দেশটিতে অন্তত একজন মারা গেছেন। দেশটি চলতি মাসের প্রথম দুই দিনেই ২৮ হাজার ৩০০ করোনা রোগী শনাক্ত করেছে, যার বেশিরভাগই ব্যাংককের মহানগর এলাকায়।
থাইল্যান্ডের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কমপক্ষে ৭০ জন কোভিডে মারা গেছেন। দেশটিতে মৃত্যুর হার প্রতি এক লাখে শূন্য দশমিক ১০৬ জন। এতে বোঝা যায়, ভাইরাসটি আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেনি।
ইন্দোনেশিয়া তার স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকার এবং করোনা নজরদারি জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে। কারণ নতুন ও সহজে ছড়ায় এমন কিন্তু কম প্রাণঘাতী ধরনগুলোর কারণে সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো ওমিক্রনের উপধরন LF.7 এবং NB.1.8.1 নজরে রেখেছে, যেগুলো এশিয়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এই ধরনগুলো এখনো উদ্বেগজনক ধরন হিসেবে চিহ্নিত হয়নি, তবে এগুলোর কারণে সংক্রমণ বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
NB.1.8.1 উপধরন এর আগে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে। এটি দুটি করোনাভাইরাস ধরনের সংমিশ্রণ থেকে তৈরি একটি রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাস।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট লারা হেররো সন্দেহ করছেন NB.1.8.1 অন্যান্য ধরনের চেয়ে সহজে ছড়ায়।
ল্যাবরেটরিতে টিস্যুতে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই নতুন ধরনটি মানব কোষের রিসেপ্টরের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি শক্তভাবে যুক্ত হতে পারে, যা কোষে প্রবেশ সহজ করে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, বর্তমান করোনা টিকা নতুন ধরনগুলোর কারণে সৃষ্ট তীব্র উপসর্গের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
তবে ভারতে এখনও প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন সংক্রমণ পুরনো JN.1 ধরন থেকেই হচ্ছে।
সংক্রমিত অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো মৃদু হয় এবং নিজের থেকেই বা সাধারণ ওষুধ যেমন কাশির সিরাপ, ব্যথানাশক ও নাক খোলার ওষুধ খেলে সেরে যায়।
তবে বয়স্ক ও আগে থেকেই অসুস্থ লোকজনকে উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কারও শ্বাসকষ্ট, চরম ক্লান্তি বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা নিতে হবে।