মেলবোর্ন, ১২ জুন— বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)। এর ফলে তিনি যুক্তরাজ্যে থাকা তার সম্পত্তিগুলো বিক্রি করতে পারবেন না বা এসবের ওপর আর্থিক লেনদেন চালাতে পারবেন না।
বুধবার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়ে আল-জাজিরা বলছে, পদক্ষেপটি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে এবং চলমান অর্থপাচার তদন্তের অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি বিষয়টি আল-জাজিরা ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটকে নিশ্চিত করেছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মানসুরের মতে, চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে লন্ডনের ফিটজরোভিয়া ও টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি অন্তর্ভুক্ত। এই সম্পত্তিগুলো অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে। বাংলাদেশের আদালত তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া, তার পরিবারের সদস্যদেরও সম্পত্তি জব্দের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তদন্তে সহায়তা প্রদান করছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর জানিয়েছেন, চৌধুরীর সম্পত্তি কেনার উৎস সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করার ঘটনাটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্তর্জাতিক তদন্তের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তার পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালে আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, যেখানে বলা হয়, ৫৬ বছর বয়সী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। যার মধ্যে অনেক বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট অন্তর্ভুক্ত।
যদিও এনসিএ-র পুরো তদন্ত ও সম্পত্তি জব্দের বিস্তারিত এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে এটা নিশ্চিত যে, লন্ডনের অভিজাত সেন্ট জন’স উড এলাকায় চৌধুরীর একটি বিলাসবহুল বাড়ি এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক হতে পারে। বিশেষত শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের অনুসন্ধান ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপের প্রেক্ষাপটে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাজ্য সরকার এখন আরও সক্রিয়ভাবে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ ইস্যুতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, এমনকি রাজনৈতিক সংবেদনশীল প্রসঙ্গগুলোতেও।