মেলবোর্ন, ২৬ এপ্রিল— ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের ও যৌন ব্যবসায়ী জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকারী নারী ভর্জিনিয়া জুফ্রি আত্মহত্যা করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৪১ বছর। তার পরিবার এই খবর নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার রাতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার নীরগ্যাবির একটি বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জুফ্রি ছিলেন দণ্ডিত যৌন অপরাধী এপস্টেইন এবং তার প্রাক্তন বান্ধবী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে অন্যতম স্পষ্টবাদী অভিযোগকারী। তিনি দাবি করেছিলেন, তারা তাকে ১৭ বছর বয়সে ডিউক অব ইয়র্ক (প্রিন্স অ্যান্ড্রু)-এর কাছে পাচার করেছিল। তবে প্রিন্স অ্যান্ড্রু এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছিলেন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে তার স্বজনরা বলেন, তিনি যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন ‘অদম্য যোদ্ধা’ ছিলেন এবং এই ‘নির্যাতনের বোঝা… অসহনীয় হয়ে উঠেছিল।’
পরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজীবন যৌন নির্যাতন ও পাচারের শিকার হওয়ার পর তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
“ভর্জিনিয়া জুফ্রি যৌন নির্যাতন ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন অদম্য যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ছিলেন সেই আলো, যা বহু বেঁচে ফেরা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিল”—বিবৃতিতে আরও বলা হয়।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া পুলিশ জানিয়েছে, তিন সন্তানের মা ভর্জিনিয়া বৃহস্পতিবার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার নিজ খামারবাড়িতে আত্মহত্যা করেন। শুক্রবার রাতে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
সম্প্রতি, জুফ্রি তার স্বামী রবার্ট এবং সন্তানদের সঙ্গে নর্থ পার্থে বসবাস করছিলেন। তবে কিছু সংবাদসূত্র বলছে, ২২ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে, জুফ্রি ইনস্টাগ্রামে জানান যে তিনি একটি গুরুতর গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তার পরিবার পরে জানায়, এটি তিনি জনসমক্ষে আনার ইচ্ছা করেননি। স্থানীয় পুলিশ পরে দুর্ঘটনার তীব্রতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।
নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ করার পর জুফ্রি একজন বিশিষ্ট কর্মী হয়ে ওঠেন এবং পশ্চিমা বিশ্বের মি টু (Me Too) আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
জুফ্রি অভিযোগ করেন, এপস্টেইন ও গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল তাকে ১৭ বছর বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর কাছে পাচার করেছিলেন।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২০২২ সালে আদালতের বাইরে এক সমঝোতায় পৌঁছান। এই সমঝোতায় তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এতে কোনো দায় স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়ার বিষয় ছিল না।
আমেরিকান নাগরিক জুফ্রি জানান, ২০০০ সালে ব্রিটিশ সমাজসেবী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে তার প্রথম পরিচিত হন। সেখান থেকেই তিনি পরিচিত হন মার্কিন আর্থিক উদ্যোক্তা জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে এবং পরে বছরের পর বছর ধরে তার এবং তার সহযোগীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন।
এপস্টেইন ২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করেন, তখন তার বিরুদ্ধে যৌন পাচারের মামলায় বিচার চলছিল। ২০০৮ সালে তিনি একজন অপ্রাপ্তবয়স্কের কাছ থেকে দেহব্যবসা চাওয়ার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
ম্যাক্সওয়েলকে এপস্টেইনের পাচার এবং নির্যাতনে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।