মূল খবর প্রকাশিতঃ ২৮ এপ্রিল ২০২৫, UN News – Humanitarian Aid
মেলবোর্ন, ১০ মে—গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। সেখানে এখন লক্ষাধিক মানুষ কেবল একবেলা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। খাদ্য সহায়তা প্রবেশে দীর্ঘদিনের বাধা ও চলমান সামরিক অভিযানের ফলে খাদ্য, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি এবং আশ্রয় সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, গাজায় খাদ্যের মজুদ প্রায় শেষ। এই খবর যখন OTN বাংলায় প্রকাশিত হচ্ছে মূল প্রতিবেদন তারও দুই সপ্তাহ আগে করা হয়েছে। অথচ সীমান্তে হাজার হাজার ট্রাক জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও, সীমান্ত খুলে দেওয়া হচ্ছে না। মানবিক কর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, এই অবরোধের ফলে ক্ষুধা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
UNRWA একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এক নারী, উম মোহাম্মদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে, যিনি প্রতিদিন ১১ জনের জন্য একবেলা খাবার তৈরি করেন।
“আমার কিছুটা ময়দা আছে, কিন্তু আশপাশের মানুষদের প্রায় কিছুই নেই,” তিনি বলেন। “রুটি বানানোর সময় আমার লজ্জা হয়। আশপাশের শিশুদের মাঝে আমি কিছুটা ভাগ করে দেই। আমরা প্রতিদিন একবেলা খাই—রুটি, টিনজাত খাবার, ডাল, চাল। কিন্তু এগুলো শেষ হয়ে গেলে কী করব, জানি না।”
২ মার্চ ২০২৫ থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। এরপর থেকে কোনও ধরনের মানবিক বা বাণিজ্যিক পণ্য সেখানে প্রবেশ করেনি। অক্টোবর ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ। বর্তমানে খাদ্য ছাড়াও ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপদ পানি ও আশ্রয়ের সরবরাহও ভেঙে পড়েছে।
WFP জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের যুদ্ধবিরতি সময়ের তুলনায় খাদ্যের দাম ১৪০০ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্য সংকট এতটাই তীব্র যে UNRWA-এর রান্নাঘরগুলোতে মজুদ খাদ্য শেষ হয়ে গেছে এবং ২৫টি বেকারি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে, খাদ্যবাহী ট্রাক ও গুদামে লুটপাটের ঘটনাও বাড়ছে। সম্প্রতি দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে। খাদ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতেও ভয়াবহ সংকট চলছে।
WHO জানিয়েছে, গাজায় তাদের গুদামে থেরাপিউটিক দুধ, ব্যথানাশক, ইনজেকশনযোগ্য অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রাংশ ও অক্সিজেন সরবরাহের উপকরণ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের—যেমন অস্থিসার্জন ও প্লাস্টিক সার্জনদের—প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।

মানবিক অংশীদার সংস্থাগুলোর মতে, জানুয়ারি থেকে প্রায় ১০,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১,৬০০ শিশু গুরুতর অবস্থায় আছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে, তবে সেগুলোর নাগাল পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে অপারেশনাল ও নিরাপত্তাজনিত বাধার কারণে।
বর্তমানে সীমান্ত খুলে দেওয়ার অপেক্ষায় UNRWA-এর ৩,০০০ ট্রাক এবং WFP-এর ১১৬,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে, যা ১০ লাখ মানুষের চার মাসের খাদ্য প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। তবুও, যতক্ষণ না সীমান্ত খুলছে, গাজা ক্ষুধা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করে চলেছে।
📌 সূত্র: UN News – Humanitarian Aid, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
https://news.un.org