মূল ফিচার-নেলসন গ্রুম- নিউজ.কম.এইউ
জাপানে ছুটি কাটাতে গিয়ে এক অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক জানালেন কীভাবে তিনি ‘ভাড়ায় প্রেমিকা’ নিয়েছিলেন—তবে এটি মোটেই যৌনতা বা প্রেমের প্রচলিত ধারণার সঙ্গে মেলে না। এটি বাস্তবিকই এক সামাজিক সম্পর্কের বিকল্প সংস্কৃতি, যা বিস্ময়কর হলেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অস্ট্রেলিয়ান কনটেন্ট নির্মাতা জর্ডেন টুয়ালি ‘রেন্টাল গার্লফ্রেন্ড’ অভিজ্ঞতার জন্য টোকিওতে এক এজেন্সির মাধ্যমে দুইজন মেয়েকে ভাড়া নেন। পার্কে কুকুর নিয়ে সময় কাটানো, কথাবার্তা, হাসি—সব মিলিয়ে এটি ছিল এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে এক গভীর সামাজিক বাস্তবতা। তাঁর খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, তবে ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে সেই ব্যয় আয়েও রূপান্তর করেন।
এই সেবার জনপ্রিয়তা অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশে বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণরা যখন প্রেমের জগতে ক্রমশ হতাশ ও একাকী হয়ে পড়ছেন। ডেটিং অ্যাপের ক্লান্তি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব অনেককেই ঠেলে দিচ্ছে এই বিকল্প সেবার দিকে।
প্রেমিকা ভাড়া করা হলেও কোনও গ্রাহকের সঙ্গে একান্তে থাকা বা তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা বা চাকরি বাতিল হতে পারে।
জাপানে এই পরিষেবা কঠোর নিয়মের অধীনে পরিচালিত হয়। প্রেমিকা ভাড়া করা হলেও কোনও গ্রাহকের সঙ্গে একান্তে থাকা বা তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা বা চাকরি বাতিল হতে পারে।
গোল্ড কোস্টের কায় ম্যানুয়েল, যিনি একজন এসকর্ট হিসেবেও কাজ করেন, স্পষ্ট করে বলেন, এই পরিষেবা যৌনতার জন্য নয়। “আমি যৌনতার জন্য টাকা নিচ্ছি না,” তিনি বলেন। “আমি যোগাযোগের জন্য টাকা নিচ্ছি।” তিনি জানান, এই ডেটগুলো সাধারণত পিকনিক, সিনেমা দেখা, ডিনার কিংবা ঘর পরিষ্কারের মতো কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
“মানুষ ভুলভাবে ধরে নেয় আমরা কেবল এসকর্ট, যা আমরা নই,” কায় বলেন। “যদি আপনি খুশি মনে একজন মেয়েকে ডেটে নিয়ে যান এবং আর কখনও দেখেন না, তাহলে কেন এমন কাউকে সময় দেবেন না, যিনি সবসময় স্নেহ এবং সহানুভূতির জন্য প্রস্তুত থাকবেন?”
নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের লায়লা কেলি বলেন, অনলাইনে প্রচুর ‘ভার্চুয়াল গার্লফ্রেন্ড’ অনুরোধ পেয়ে তিনি এই পরিষেবায় আগ্রহী হন। “আমি বুঝতে পারি, মানুষ কেবল নগ্ন ছবি নয়, সম্পর্ক ও সংযোগ চায়,” তিনি বলেন। জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সময়েও এই পরিষেবার চাহিদা কমেনি—বরং বেড়েছে। “মানসিক চাপ অনেক সময় এই ধরনের সেবার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়,” বলেন কেলি। “সবাই চায় না নিজেদের সমস্যা প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। এই পরিষেবা তাদের একদিকে কথা বলার সুযোগ দেয়, অন্যদিকে এক নতুন অভিজ্ঞতাও দেয়।”
রেন্টাল গার্লফ্রেন্ড একাকীত্বের সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। আপনি জানেন, যার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তিনি কেবল টাকার বিনিময়ে এসেছেন। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, কারণ মানুষ যখন সময় কাটায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সংযোগ তৈরি হয়।”
তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করছেন—এটি হতে পারে কেবল একটি সাময়িক সমাধান।
সিডনির সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সামান্থা জেইন বলেন, “এটি একাকীত্বের সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। আপনি জানেন, যার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তিনি কেবল টাকার বিনিময়ে এসেছেন। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, কারণ মানুষ যখন সময় কাটায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সংযোগ তৈরি হয়।”
তবে জেইন মনে করেন, এই পরিষেবা সামাজিক উদ্বেগে ভোগা মানুষদের জন্য উপকারী হতে পারে—তারা কথা বলার অনুশীলন করতে পারেন প্রত্যাখ্যানের ভয় ছাড়াই। যদিও এটি নেতিবাচক দিকও আনতে পারে—আরও বেশি একাকী ও হতাশ বোধ করাতে পারে।
তিনি বলেন, ডেটিং অ্যাপ ক্লান্তিও এই পরিষেবার প্রসারে ভূমিকা রাখছে। “মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে—স্বাইপ করা, নো শো, ঘোস্টিং, ম্যাচ না পাওয়া—সব মিলিয়ে হতাশা কাজ করছে। তবে আপনি যদি এমন কিছু বিবেচনা করেন, তার আগে ডেটিং কোচের মতো বিকল্প ভাবুন—অনেকেই আপনার মতো অবস্থায় আছেন।”
এই পরিষেবার বিশেষ মূল্য রয়েছে, কারণ এটি যৌনতা, থেরাপি ও ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের মাঝামাঝি অবস্থানে কাজ করে। “একজন বাস্তব মানুষের সঙ্গে সংযোগ থাকার অর্থ হচ্ছে—আপনি অনুভব করেন যে কেউ আপনাকে দেখছে, শুনছে, এবং যত্ন নিচ্ছে—ইভেন যদি সেটা পেইড হয়,” বলেন কিম।
সিডনির সম্পর্ক কোচ স্যুসি কিম মনে করেন, এই পরিষেবার বিশেষ মূল্য রয়েছে, কারণ এটি যৌনতা, থেরাপি ও ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের মাঝামাঝি অবস্থানে কাজ করে। “একজন বাস্তব মানুষের সঙ্গে সংযোগ থাকার অর্থ হচ্ছে—আপনি অনুভব করেন যে কেউ আপনাকে দেখছে, শুনছে, এবং যত্ন নিচ্ছে—ইভেন যদি সেটা পেইড হয়,” বলেন কিম।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এটি যেন একমাত্র নির্ভরতা না হয়ে ওঠে। “যদিও এটি বাণিজ্যিক, তবু এই অভিজ্ঞতা তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন তাতে বাস্তব যত্ন থাকে। না হলে, এটি আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে তুলতে পারে।”
তিনি বলেন, এই পরিষেবাকে সম্পর্ক বা থেরাপির বিকল্প হিসেবে নয়—সহায়তা হিসেবে দেখা উচিত।
এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উঠে আসে এক গভীর বাস্তবতা: একাকীত্ব এমন এক শক্তি, যা মানুষকে অপরিচিতদের সঙ্গেও অর্থ দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করে। ডিজিটাল যুগে মানুষ মানুষের সংযোগ খোঁজে, এই ধরনের পরিষেবা হয়তো সাময়িক শান্তি দেয়—কিন্তু আত্মার সংযোগ গড়ে তুলতে, এখনও প্রকৃত সম্পর্কই আসল মাধ্যম।
নেলসন গ্রুমের লেখা অবলম্বনে
