মেলবোর্ন, ২৮ মে— ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুজরাটে এক নির্বাচনি সমাবেশে করা মন্তব্যকে ‘বেপরোয়া’ ও ‘উসকানিমূলক’ বলে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর।
ডনের প্রতিবেদন অনুসারে, মোদির এই বক্তব্যকে ‘নাটকীয় প্রচারণা’ বলে আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে যেভাবে সংযত হওয়া প্রয়োজন, তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি এই বক্তব্যে।
সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুজরাটে এক নির্বাচনি সমাবেশে বলেন, “শান্তিতে বাঁচো, রুটি খাও, না হলে আমার গুলি তো তোমাদের জন্য তৈরি আছে।”
একই সমাবেশে তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আর ভারত গড়ে তুলছে পর্যটনের স্বপ্ন। মানুষকে কাছে আনে ট্যুরিজম। কিন্তু পাকিস্তান ভাবে টেরোরিজমই ট্যুরিজম। এটি গোটা বিশ্বের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি।”
এই প্রসঙ্গে জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানায়, “এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য কেবল উত্তেজনাই বাড়ায়। এটি জাতিসংঘ সনদের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থি, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে পারস্পরিক বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
পাকিস্তান জানায়, কাশ্মীরের জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জনসংখ্যাগত প্রকৃতি বদলে দেওয়ার চেষ্টাকে ঢাকতে মোদি সরকার এই ধরনের উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যদি চরমপন্থাই ভারতের আসল উদ্বেগ হয়, তবে তাদের উচিত নিজ দেশের ভেতরে উঁকি দেওয়া। যেখানে সংখ্যাগুরুবাদ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের নামে।”
পাকিস্তান স্পষ্ট জানিয়েছে, শান্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি থাকলেও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত এলে তারা ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ’ মোতাবেক যথাযথ জবাব দেবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির শেষাংশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা ভারতের ‘উসকানিমূলক বক্তব্য ও ক্রমবর্ধমান যুদ্ধবাদী মনোভাব’কে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
কাশ্মীরের পাহালগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নতুন পর্ব শুরু হয়। প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদকে অভিযুক্ত করে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। জবাবে পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় জেট গুলি করে ভূপাতিত করে এবং দুই দেশের সীমান্তে পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা ও এয়ারবেস টার্গেটিং শুরু হয়। পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।