মেলবোর্ন, ১৪ জুন— রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ইরানি সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদের প্রাণহানির পর ইসলামিক বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সায়্যেদ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েলকে বেদনাদায়ক শাস্তি দেওয়া হবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইসরায়েলের হামলার পর দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইসরায়েলি হামলাটি এদিন ভোরের দিকে সংঘটিত হয়, যেখানে ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন আবাসিক ভবন লক্ষ্য করা হয়। এতে অনেক সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান এবং দেশটির উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান হোসেইন বাকেরি, ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, খাতামু আম্বিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ, এবং দুই পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ মাহদি তেহরাঞ্চি ও ফেরিদুন আব্বাসি উল্লেখযোগ্য।
খামেনির বার্তা: প্রতিশোধের হুমকি
হামলার পর আয়াতুল্লাহ খামেনি এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থাকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই অপরাধের জন্য জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থা কঠোর শাস্তি পাবে এবং তাদের শয়তানি প্রকৃতি আরও একবার প্রকাশিত হয়েছে।”
তাঁর ভাষায়, “ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিশালী হাত তাদের (ইসরায়েল) ছেড়ে দেবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যে কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীরা শহীদ হয়েছেন, তাদের সহকর্মী এবং উত্তরসূরিরা তাদের দায়িত্বে অবিচল থাকবে এবং অবিলম্বে তাদের কাজ শুরু করবে। আয়াতুল্লাহ খামেনি আশ্বস্ত করেন যে, জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থা নিজের জন্য একটি “তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি” তৈরি করেছে, যা তারা অবশ্যই দেখতে পাবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা শুধুমাত্র ইরানের জন্য নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। অনেক রাষ্ট্র, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নৈতিকতা এবং আইনি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অন্যদিকে, ইরানও এই হামলার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রতিরোধের শক্তি ও নৈতিকতার প্রতি দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে চাইছে।
প্রতিরোধ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এ হামলার পর ইরান ঘোষণা করেছে যে তারা যথাযথ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবে এবং জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেই সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি এবং জাতির একতার ওপর জোর দিয়েছেন, যা ইরানের পক্ষ থেকে আগাম প্রতিক্রিয়া স্বরূপ হতে পারে।
ইসরায়েলি হামলা, যেখানে শুধু সামরিক লক্ষ্য নয়, বরং আবাসিক এলাকার ওপরও আক্রমণ চালানো হয়েছে, ইরানকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেকে আরও শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ দিয়েছে। ইরান আশাবাদী যে তার সশস্ত্র বাহিনী এবং সামরিক শক্তি জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে এবং দেশটির প্রতি কঠোর শাস্তি প্রদান করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যেই হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বড় ধরনের একটি জুয়া খেলেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ইসরায়েল আশাবাদী যে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমেরিকা ইসরায়েলকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।