মেলবোর্ন, ১৫ জুন- টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়।
পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। এমন অবস্থায় হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালী বন্ধের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলেও ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ইরান।
প্রশ্ন উঠেছে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব কী হবে? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে।
রবিবার (১৫ জুন) সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়বে আশঙ্কাজনকভাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এড হির্স জানিয়েছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরআইএনএন এর খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। আর এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির সংসদের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কসারি।
বিজ্ঞাপন
এড হির্স আল জাজিরাকে বলেন, “এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই অঞ্চলের জন্য কোনো সহজ বিকল্প রুট নেই— বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য।”
হির্স ব্যাখ্যা করেন, যদি হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। আর দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব বিশ্বজুড়ে সব দেশের ওপরই দ্রুত পড়বে।
এড হির্স মনে করেন, প্রণালী বন্ধ হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানে সরাসরি হামলার একটা অজুহাত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে।
তিনি বলেন, “তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে তা হবে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর আক্রমণ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপরও। এমন পরিস্থিতি হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।”
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী হলো পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ)-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মোট তেল চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।
মূলত হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ পানিপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।