মেলবোর্ন, ১৬ জুন— ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি রবিবার জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি তেহরানের ওপর সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করে, তবে ইরানও তার প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ করতে প্রস্তুত।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানায়, তেহরানে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে আরাকচি বলেছেন, “এই যুদ্ধ ইরানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। আমাদের প্রতিরক্ষা বৈধ। কেবলমাত্র আগ্রাসনের জবাবে শক্তি প্রয়োগ করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে, তাহলে ইরানও তার প্রতিক্রিয়া বন্ধ করবে।”
উত্তেজনার পেছনে সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা হামলা
শুক্রবার ইসরায়েল তেহরানে একযোগে বিমান হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। এর জবাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান পাল্টা হামলা শুরু করে।
শনিবার রাতে ইরান “ট্রু প্রমিস থ্রি” নামে একটি দ্বিতীয় ধাপের অভিযান শুরু করে, যা মূলত ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের অর্থনৈতিক ও শিল্প কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, ইসরায়েলও তেহরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তেল ডিপোগুলোতে হামলা চালায়।
ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি আক্রমণের প্রথম দিনে ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং দ্বিতীয় দিনে আরও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
এই সহিংসতার কারণে ওমানে অনুষ্ঠেয় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা (ষষ্ঠ দফা) স্থগিত হয়ে গেছে, যা রবিবার মাসকাটে হওয়ার কথা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার অভিযোগ
আরাকচি অভিযোগ করেন, ইসরায়েলের এই “আগ্রাসন” যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি এবং বাহিনী এই হামলায় ইসরায়েলকে সহযোগিতা করেছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “এই হামলা আমেরিকান যন্ত্রপাতি ছাড়া সম্ভব হতো না।” ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে আরও ধাপ রয়েছে।
ইরানের ইসফাহান প্রদেশে অবস্থিত নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা নেই—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি ইরান প্রত্যাখ্যান করেছে।
আরাকচি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিই কোনো ভূমিকা না থাকে, তাহলে তাদের উচিত প্রকাশ্যে এই হামলার নিন্দা করা। ব্যক্তিগত বার্তা যথেষ্ট নয়।”
আন্তর্জাতিক আহ্বান ও পারমাণবিক আলোচনার ভবিষ্যৎ
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা ইসরায়েলের “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের” বিষয়টি স্বীকার করে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলি নাশকতার মধ্য দিয়েই ভিয়েনায় চলমান পারমাণবিক আলোচনার ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। এর পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০ শতাংশে উন্নীত করে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসায়।
আরাকচি জানান, পাঁচ দফা আলোচনার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতার পথ বের করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং একটি পাল্টা প্রস্তাবও তৈরি করেছে। কিন্তু ইসরায়েল বরাবরই এই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-কে আহ্বান জানিয়েছে যেন নাতাঞ্জ হামলা নিয়ে জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়। তিনি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের “লাল রেখা” অতিক্রম বলে বর্ণনা করেন।