মেলবোর্ন, ১৩ মে—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পর এবার ক্ষমতাচ্যুত দলটির নিবন্ধনও স্থগিত হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এর ফলে নিজ নামে আওয়ামী লীগের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ রইল না।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর রাতে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সংবাদকর্মীদের বলেন, ”স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এর আলোকে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হলো।”
বিকালে সরকারের নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন।
বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ অংশ নেন।
কোন যুক্তিতে নিবন্ধন স্থগিত হলো- এই প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন তার ধারাবাহিকতায় আমরা এটা করেছি।”
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ এর আগে নিবন্ধন শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪৯ টি দল নিবন্ধিত রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে যা বলা
নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কথা তুলে ধরে বলা হয়, “সেহেতু বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নিবন্ধন (নম্বর-০০৬ তারিখ: ০৩/১১/২০০৮) এতদ্দ্বারা স্থগিত করল।”
আইনে যা রয়েছে
নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ৯০ জ অনুচ্ছেদ দফা ১ (খ) অনুযায়ী সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে।
এই আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পূরণ হলে নির্বাচন কমিশন একটি দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।
প্রথমত. যদি কোনো দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে বা নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করে;
দ্বিতীয়ত. যদি সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে;
তৃতীয়ত. যদি দলটি পরপর তিন বছর ইসির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়;
চতুর্থত. যদি দলটি ৯০খ(১)(খ) অনুচ্ছেদের বিধান লঙ্ঘন করে;
এবং
পঞ্চমত. যদি দলটি পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়।
এর মধ্যে সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষণার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলকে শুনানির সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে অন্যান্য যে কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিলের আগে সংশ্লিষ্ট দলকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়।
আইনে আরও বলা হয়েছে, নিবন্ধন বাতিল হলে সেই নামে ভবিষ্যতে আর কোনো দল নিবন্ধন করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশের পর উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকবে।