মেলবোর্ন, ২১ মে – (OTN Bangla): অস্ট্রেলিয়ান রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী ও রাশিয়াপন্থী প্রচারক সিমিওন বয়কভ, যিনি দুই বছর ধরে সিডনির রাশিয়ান কনস্যুলেটে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন, তার আইনি খরচ বহন করেছে ‘প্রাভফন্ড’ নামে একটি রুশ তহবিল, যা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে।
এবিসি ইনভেস্টিগেশনস এবং OCCRP-এর এক যৌথ তদন্তে প্রকাশিত ৫০,০০০ ইমেইলের একটি বিশাল আর্কাইভ থেকে জানা যায়, প্রাভফন্ড শুধু বয়কভের আইনি সহায়তাই প্রদান করেনি, বরং তার রুশ নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রেও লবিং করেছে।
প্রাভফন্ড অতীতে অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্টর বাউট এবং ২০১৯ সালে বার্লিনে চেচেন যোদ্ধাকে হত্যাকারী ভাদিম ক্রাসিকভের আইনি খরচও বহন করেছে। তহবিলটির উপপরিচালক ভ্লাদিমির পোজদোরভকিনসহ বহু কর্মকর্তাই সাবেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে পরিচিত।
বয়কভের স্ত্রী অন্তত তিনবার প্রাভফন্ডের কাছে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে আইনি ব্যয়ের জন্য $৩৬,৮৫০ অনুরোধ করা হয়েছিল। একাধিক ইমেইলে প্রমাণ পাওয়া যায় যে ‘সিডনি সিটি ক্রাইম’ নামের একটি আইনি প্রতিষ্ঠানে প্রাভফন্ডের অর্থে অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
বয়কভ, যিনি ‘অজি কসাক’ নামে পরিচিত, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক ইউক্রেনীয় ব্যক্তির উপর হামলার অভিযোগে দণ্ডিত হন এবং পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে কনস্যুলেটে আশ্রয় নেন।
২০২৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক আদেশে বয়কভ রুশ নাগরিকত্ব পান। কনস্যুলেটেই তাকে পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, “আমি এখন একজন রুশ নাগরিক হিসেবে প্রোপাগান্ডামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।”
বয়কভ রাশিয়ান প্রভাবিত গণমাধ্যম ‘রাশিয়া টুডে’ এবং স্পুটনিক-এর পক্ষে ইংরেজি ও রুশ ভাষায় প্রতিবেদন তৈরি করতেন। তিনি প্রাভফন্ডের কাছে কনস্যুলেটে একটি সম্প্রচার স্টুডিওর জন্য অতিরিক্ত জায়গার অনুরোধও জানান।
তাঁর কথায়, “আমার স্টুডিও অস্ট্রেলিয়ায় রাশিয়ার পক্ষে সবচেয়ে সক্রিয় এবং স্থায়ী তথ্য কাঠামো।”
বয়কভের স্ত্রী একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে, কনস্যুল জেনারেল ইগর আর্জায়েভ বয়কভের উপর মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন, তার চলাচলের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এমনকি, বয়কভকে পুলিশে তুলে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে।
ইউরোপীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে, প্রাভফন্ড একটি রাশিয়ান গোয়েন্দা চালিত তহবিল, যার মূল লক্ষ্য রুশ-ভাষী অভিবাসীদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা। এস্তোনিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা KAPO-এর মুখপাত্র বলেন, “এই ফাউন্ডেশনটি মূলত রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সম্প্রসারণ।”
বয়কভ স্বীকার করেছেন যে তিনি প্রাভফন্ডের অতীত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। বরং তিনি বলেন, “আমি তাদের সবাইকে নায়ক মনে করি। তারা আমার স্বদেশি। আমি নিজেও একজন দেশপ্রেমিক।”
তবে তার সাবেক আইনজীবী মার্ক ডেভিস দাবি করেছেন, তারা কোনও রুশ সংগঠনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত ছিলেন না এবং তাদের সব বিল বয়কভ নিজেই প্রদান করেছেন।
বয়কভ বর্তমানে কনস্যুলেট ছাড়তে রাজি, তবে কেবল রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তনের শর্তে। তিনি বলেন, “আমি কেবলমাত্র রুশ সরকারের উপর ভরসা করি এবং রাশিয়ায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করছি।”
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রাভফন্ড এবং সিডনির রুশ কনস্যুলেট এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।