মেলবোর্ন, ২২ মে—বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে ৪১ জন অস্ট্রেলিয়ান সংসদ সদস্য (এমপি) একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। বুধবার (২১ মে) পাঠানো চিঠিতে তারা নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ, জুলাই অভ্যুত্থানের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ভেঙে ফেলার কথা জানিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “আমরা আপনার প্রশাসনকে অবিলম্বে ও প্রকাশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাবদ্ধ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানাই। এটি একটি অতি জরুরি ও আপোষহীন পদক্ষেপ যা বাংলাদেশের একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”
এছাড়া এমপিরা উল্লেখ করেন, বিলম্ব বা অনিশ্চয়তা জনআস্থার ঘাটতি আরও বাড়াবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক বৈধতার পথ নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিগত তিনটি নির্বাচনে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধতা ছিল না। নির্বাচনী অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার এবং একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য আমরা আপনার সরকারকে অনুরোধ করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের জন্য একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশ সম্প্রদায় আমাদের জানিয়েছে, তারা আশা করে যে এই বছরেই তা হবে এবং অযাচিত প্রভাব বা দমন রোধ করে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে সম্ভাব্য সকল উপায় ব্যবহার করুন।
“বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা আপনার নেতৃত্বের কাছ থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ আশা করছি এবং গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপে সহায়তা করার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
অস্ট্রেলীয় বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমরা একাধিক আবেদন পেয়েছি যাতে আমরা আপনার সরকারকে স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং বিচারের মাধ্যমে অতীতের রাজনৈতিক সহিংসতার অপরাধের জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করার অনুরোধ জানাই। তারা সত্য, ন্যায়বিচার এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে। আমরা এই আহ্বানকে স্বীকার করি।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিদের মধ্যে রয়েছেন: সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, সিনেটর ডেভিড শোব্রিজ, সিনেটর জর্ডন স্টিল-জন, সিনেটর ফাতিমা পেম্যান, সিনেটর লিডিয়া থর্প, সিনেটর পেনি অলম্যান-পেইন, সিনেটর মেহরিন ফারুকি, সিনেটর স্টেফ হজগিন্স-মে, সিনেটর বারবারা পোকক, সিনেটর পিটার হুইশ-উইলসন, সিনেটর, ডোরিন্ডা কক্স, সিনেটর নিক ম্যাককিম, সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়ং, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, অ্যাবিগেল বয়েড (এনএসডব্লিউ এমএলসি), আমান্ডা কোহন, ক্যাথরিন কোপসি, (এমএলসি), সু হিগিনসন (এনএসডব্লিউ এমএলসি), কেট ফেহরম্যান (এনএসডব্লিউ এমএলসি), আনাসিনা গ্রে-বারবেরিও (এমএলসি), আইভ পুগলিয়েলি (এমএলসি), ড. সারাহ ম্যানসফিল্ড (এমএলসি), ব্র্যাড পেটিট (এমএলসি), জেনি লিওং (এনএসডব্লিউ এমপি), তামারা স্মিথ (এনএসডব্লিউ এমপি), কোবি শেট্টি, (এনএসডব্লিউ এমপি), টিম রিড এমপি, এলেন স্যান্ডেল এমপি, মাইকেল বার্কম্যান এমপি, গ্যাব্রিয়েল ডি ভিয়েট্রি এমপি, ড. রোজালি উডরাফ এমপি, তাবাথা ব্যাজার এমপি, সিসিলি রোজল এমপি, ক্যাসি ও’কনর এমএলসি, ভিকা বেইলি এমপি, হেলেন বার্নেট এমপি, শেন র্যাটেনবারি এমএলএ, অ্যান্ড্রু ব্র্যাডক এমএলএ, জো ক্লে এমএলএ, লরা নাটাল এমএলএ, রবার্ট সিমস এমএলসি এবং ড. মাইক ফ্রিল্যান্ডার এমপি।
এই চিঠি এমন সময়ে এসেছে যখন ইউনূস পাঁচ মাস আগে ঘোষণা দিলেও এখনও নির্দিষ্ট নির্বাচনের সময়সূচি দেননি। বিএনপি অবিলম্বে নির্বাচন চাইলেও নতুন গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি বলছে, তার আগে ব্যাপক সংস্কার দরকার।
ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চিঠিটি সম্পর্কে অবগত এবং উল্লেখ করেছে, “এটি অস্ট্রেলিয়া সরকারের নীতির প্রতিফলন নয়। পার্লামেন্ট সদস্যরা নিয়মিত জনগণের পক্ষে বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।”
তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচনেই বৈধতার ঘাটতি ছিল, যা একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়েছে।” তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার তাগিদ দেন।
এছাড়া, সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন এবং অতীত রাজনৈতিক সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তারা। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীদের জন্য ‘সত্য, ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া’ চালুর দাবি জানান।
চিঠিতে র্যাব বিলুপ্তিরও আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে—যেমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে র্যাব কর্তৃক ২,৬৯৯ জন মানুষ বেআইনিভাবে নিহত হয়েছেন।
এই চিঠি অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্বেগ ও প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।