আজ জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়—১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। এই ভয়াল রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়, যা বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। ওই রাতের হত্যাকাণ্ড আজও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন একটি জাতি তার অধিকারের জন্য জেগে ওঠে শোষকেরা কতটা নিষ্ঠুর এবং নির্মম হতে পারে।
এই অভিযানে নিরস্ত্র বাঙালি সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ ও ইপিআর সদস্যদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় এক বধ্যভূমিতে। অমুসলিম ছাত্রাবাস জগন্নাথ হল, ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল), পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলো ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র, পরিণত হয় হত্যাকাণ্ডের প্রধান টার্গেটে। এর অন্যতম শিকার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল—যেখানে শত শত শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল।
ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মর্টার ও মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে—উত্তরে ২৬তম বালুচ রেজিমেন্ট, পূর্বে ৪১তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং দক্ষিণে ৮৮তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স।
এই রাতের বর্বরতা ছিল শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পিত অভিযান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব কমান্ডের প্রেস অফিসার সিদ্দিক সালিক তার Witness to Surrender বইয়ে এই হত্যাযজ্ঞের বিবরণ লিখে গেছেন। অন্যদিকে অধ্যাপক আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত বইয়ে উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাকিস্তানি সেনাদের নারকীয় তাণ্ডবের চিত্র। এই সাক্ষ্যগুলো মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় সংঘটিত গণহত্যার অকাট্য প্রমাণ।
২৫ মার্চ ছিল শুধু মানুষের ওপর হামলা নয়, এটি ছিল একটি জাতির স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু ওই রাতের রক্তই হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের প্রেরণা। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ, কিন্তু এই কালরাতের স্মৃতি আমাদের জাতীয় চেতনায় গভীর দাগ কেটে গেছে।
আজ আমরা ২৫ মার্চের শহীদদের স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূল্য। তাদের রক্ত বৃথা যায়নি—তাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দায়িত্ব আমাদেরই।
আমরা ভুলব না, ভুলতে দেব না।
সম্পাদক – প্রদীপ রায়
ওটিএন বাংলা
২৫ মার্চ, ২০২৫