ভিক্টোরিয়ার, ফেদারব্রুক কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গতকাল ২৯ মার্চ শনিবার ওটিএন বাংলা দৈনিক পত্রিকার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। বাংলাদেশের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান কেবল একটি সংবাদপত্রের উদ্বোধনই নয়, ছিল প্রবাসে বাংলা সাংবাদিকতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার অঙ্গীকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এক অনন্য মুহূর্ত।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মিলিত ধ্বনিতে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত হয়ে ওঠে হৃদয়ের স্পন্দন, যা দুই দেশের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দৃঢ় আবেগেরই প্রতিফলন।
সম্মানিত অতিথিদের বক্তব্য
উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর সুসান ম্যাকইনটায়ার তার ভাষণে বলেন, “বিশ্বজুড়ে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ির এই যুগে ওটিএন বাংলার মতো সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ের সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অনেক চ্যালেঞ্জের কিন্তু ওটিএন বাংলা তাদের দায়িত্ববোধ থেকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।”

বাংলাদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার কামরুল হাসান বলেন, “ওটিএন বাংলা কেবল একটি সংবাদপত্র নয়, এটি আমাদের সমষ্টিগত সত্তার আয়না। প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এই ধারককে সকলে মিলে সমৃদ্ধ করবো।”

লেবার পার্টির পয়েন্ট কুকের এমপি ম্যাথিউ হিলাকারি তার মূল বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান সম্প্রদায়ের গর্বিত ইতিহাস ও অবদানকে লিপিবদ্ধ করতে ওটিএন বাংলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, কমিউনিটি ভিত্তিক খবর প্রকাশের পাশাপাশি ওটিএন বাংলা বহুসংস্কৃতিবাদী অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সংবাদ প্রকাশ করবে। এই পত্রিকা যেন একটি বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে সেজন্য তিনি ওটিএন বাংলার জয়যাত্রার শুভ কামনা করেন।

সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির ঝলক
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্বে শিল্পীরা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন। সাদাত খন্দকারের কণ্ঠে “সং অফ বাংলাদেশ”, ফায়াজ খন্দকারের “আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা” এবং অনন্যা চক্রবর্তীর দেশাত্মবোধক গান সবাইকে নিয়ে যায় মাতৃভূমির স্মৃতিপথে। পুরবী কালচারাল ফাউন্ডেশনের নৃত্যশিল্পী পুরবী চৌধুরীর “একবার যেতে দাওনা আমায় ছোট্ট সোনার গায়” নৃত্য পরিবেশনা অনুষ্ঠানকে করে তোলে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর আবেগময় এবং উপস্থিত দর্শকরা হয়ে যায় নস্টালজিক।



সম্প্রীতির মেলবন্ধন
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের আয়োজনে মিলনমেলায় পরিণত হয় পুরো অনুষ্ঠানস্থল। পিয়াজু, বেগুনি আর বাঙালি ছোলা বুটের স্বাদ আর গল্পের ফুলঝুরিতে সন্ধ্যা হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত।
সম্পাদকের প্রতিশ্রুতি
ওটিএন বাংলার সম্পাদক তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “এই পত্রিকা কেবল খবরের কাগজ নয়, হবে আমাদের সমষ্টিগত কণ্ঠস্বর, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের দলিল। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সত্য ও নিষ্ঠার সাথে সঠিক খবর সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।”
রাতের নীরবতায় যখন অতিথিরা একে একে বিদায় নেন, সঙ্গে করে নিয়ে যান এক অম্লান প্রত্যয় – ওটিএন বাংলা ইতোমধ্যেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।