হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি ও মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগে অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, প্রেসিডেন্টের দুঃখপ্রকাশ
প্রতিবেদন: ম্যাক্স মাতজা, বিবিসি নিউজ | অনুবাদ: OTN বাংলা ডেস্ক
মেলবোর্ন, ৩০ এপ্রিল—আমেরিকার প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে ইসলামবিদ্বেষ ও ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
প্রকাশিত দুটি পৃথক রিপোর্টে উঠে এসেছে ছাত্রদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, যেখানে অনেকে বলেছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও শিক্ষকদের আচরণে নিজেদের ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষাগত কোর্স ও ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যা হোয়াইট হাউসের অন্যতম দাবি। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই হার্ভার্ডে ইহুদিবিদ্বেষের যথাযথ প্রতিরোধ না করার অভিযোগ তুলে আসছে।
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের জন্য যে উচ্চমানের প্রত্যাশা আমরা নির্ধারণ করেছি, তার অনেক সময়ই আমরা ব্যর্থ হয়েছি—আমি এর জন্য দুঃখিত।”
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ ও প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে হার্ভার্ডে গঠিত দুটি টাস্কফোর্সের তদন্তেই এই তথ্য উঠে আসে। প্রেসিডেন্ট গারবার মঙ্গলবার রিপোর্টের সঙ্গে প্রকাশিত এক চিঠিতে লিখেছেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের জন্য যে উচ্চমানের প্রত্যাশা আমরা নির্ধারণ করেছি, তার অনেক সময়ই আমরা ব্যর্থ হয়েছি—আমি এর জন্য দুঃখিত।”
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলা এবং গাজার উপর ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের পর হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে ‘দীর্ঘদিন জমে থাকা উত্তেজনা’ ছড়িয়ে পড়ে। “আমাদের অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন যে তাদের পরিচয়ের ভিত্তিতে তারা টার্গেট ও বয়কটের শিকার হয়েছেন,” বলেন গারবার।
তিনি আরও বলেন, “হার্ভার্ড কখনও কোনও ঘৃণার আশ্রয় নেয় না, নেবেও না।”
প্রতিবেদনে কিছু “কর্মপরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি” উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভর্তি প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন। হার্ভার্ড বলেছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে আবেদনকারীদের মূল্যায়ন করা হবে তাদের ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, সহানুভূতি এবং গণতান্ত্রিক আলোচনায় অংশগ্রহণের ক্ষমতার ভিত্তিতে।
তবে হোয়াইট হাউসের দাবি ছিল আরও কঠোর—তারা বলেছে, হার্ভার্ডকে জাতি, বর্ণ, জাতীয়তা বা সেই সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে পক্ষপাত বন্ধ করতে হবে এবং আগস্টের মধ্যে “যোগ্যতাভিত্তিক” নীতি প্রয়োগ করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে—হার্ভার্ড যদি এসব না করে, তবে তাদের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নিষিদ্ধ করা হতে পারে এবং ট্যাক্স অব্যাহতি বাতিল করা হতে পারে।
এরই মধ্যে হার্ভার্ড সরকারকে মামলাও করেছে যাতে এসব পদক্ষেপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়। এই পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি একাডেমিক অনুদান স্থগিত করা।
হার্ভার্ডের আইনজীবীরা বলছেন, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে হস্তক্ষেপ করছে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট গারবার নিজে একজন ইহুদি এবং তিনি গত মাসে এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও তিনি ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। যদিও তিনি বিস্তারিত জানাননি, তবে বলেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ বুঝতে সাহায্য করেছে।