মেলবোর্ন, OTN বাংলা ডেস্ক | ৪ মে ২০২৫
📌 সারসংক্ষেপ:
- লেবার পার্টি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার সরকার গঠন করছে (৮৫+ আসন)
- অ্যান্থনি আলবানিজ ২০০৪ সালের পর প্রথম পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী
- পিটার ডাটন নিজ আসন ডিকসনে পরাজিত; কোয়ালিশনের ভরাডুবি
- প্রচারণায় বিভ্রান্তি ও ডানপন্থী ঝুঁকি কোয়ালিশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
- লেবার এখন সাহসী ও কার্যকর নীতিনির্ধারণের জন্য প্রস্তুত কি না, তা সময়ই বলবে
লেবার পার্টির জয়ের পর সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: এবিসি নিউজ।
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে লেবার পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার সরকার গঠন করতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন—২০০৪ সালের পর তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষে পুনঃনির্বাচিত হলেন। শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের ১৮ মিলিয়নের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
লেবার পার্টি এখন পর্যন্ত ৮৫টির বেশি আসনে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে, যেখানে কোয়ালিশন এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭টি আসন অর্জন করতে পেরেছে। নির্বাচনে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটনের নিজ আসন ডিকসনে পরাজয়, যা তিনি নিজেই ব্রিসবেনে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণে স্বীকার করেন।

“আমি এই দেশকে ভালোবাসি এবং এর জন্য কঠিন লড়াই করেছি,”—বলেন ডাটন।
ডাটনের পরাজয়: ঐতিহাসিক ও আত্মসমালোচনামূলক বিদায়
“আমি এই দেশকে ভালোবাসি এবং এর জন্য কঠিন লড়াই করেছি,”—বলেন ডাটন।
“এই নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদের যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা আমাদের প্রকৃত চিত্র নয়। আমরা এখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়াব, কারণ আমরা জানি আমাদের মূল্যবোধ কী, বিশ্বাস কী—এবং আমরা কখনই তা থেকে সরে আসব না।”
তবে ডাটনের প্রচারাভিযানটি ছিল ভুলে ভরা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থান, একাধিক নীতিগত ‘ব্যাকফ্লিপ’ এবং সবচেয়ে কৌতুকজনকভাবে একটি AFL বল ভুল করে এক ক্যামেরাম্যানের মাথায় লাথি মেরে দেওয়া—সবই প্রচারের পথে তাকে বেকায়দায় ফেলেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস অধ্যাপক জন ওয়ারহার্স্ট বলেন, “বিরোধী পক্ষ সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল ছিল।”
লেবারের কৌশল: নিরবতায় জয়
অন্যদিকে, লেবার একটি দৃঢ় এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রচারণা চালালেও সাহসী নীতিতে না গিয়ে অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল অবস্থানে ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, তারা ডাটনকে মূল্যায়নের সুযোগ ভোটারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল, বরং নিজেদের পক্ষ থেকে খুব একটা নতুন বা দুঃসাহসী কিছু উপস্থাপন করেনি।
ডানপন্থার বিপদ: কোয়ালিশনের সামনে আত্মসমালোচনার সময়
আগের নির্বাচনের পরই দলীয় বিশ্লেষক ও কয়েকজন এমপি ডানপন্থী অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ডাটনের মতো বিতর্কিত ও কট্টর রক্ষণশীল নেতাকে সামনে রেখে মধ্যপন্থী এলাকায় সমর্থন ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে—এমন সতর্কতা উপেক্ষা করেছিল কোয়ালিশন।
প্রচারণার শেষদিকে যেভাবে সংস্কৃতি যুদ্ধ ও তথাকথিত ‘ট্রাম্পিয়ান’ রাজনীতির দিকে তারা ঝুঁকেছিল, তাতে এখন দলের ভেতরে আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট।
“আমরা যদি মনে করি যে শুধু কয়েকটা কৌশলগত চালেই জয় আসবে, তাহলে আমরা বিভ্রান্ত। এখন সময় হয়েছে সিরিয়াস আত্মসমালোচনার। আমাদের ‘কুল এইড’ পান বন্ধ করতে হবে।”
লিবারেল দলের প্রাক্তন কৌশলবিদ টনি ব্যারি ABC-কে বলেন,
“আমরা যদি মনে করি যে শুধু কয়েকটা কৌশলগত চালেই জয় আসবে, তাহলে আমরা বিভ্রান্ত। এখন সময় হয়েছে সিরিয়াস আত্মসমালোচনার। আমাদের ‘কুল এইড’ পান বন্ধ করতে হবে।”
আলবানিজের সামনে সুযোগ: সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়
অন্যদিকে, লেবার এখন বড় ম্যান্ডেট পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে। আন্তর্জাতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে, যেমন কানাডায় দেখা গেছে, ভোটাররা পরিবর্তনের চেয়ে স্থিতিশীলতাকেই বেছে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়।
অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউট-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যামি রেমেইকিস বলেন,
“লেবার একটি ‘মধ্যপন্থী পথ’ নিয়ে নির্বাচনে গিয়েছিল এবং সেটিই তাদের ফল দিয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই শক্তিকে তারা কীভাবে কাজে লাগাবে?”
“আমরা একটি সহানুভূতিশীল দেশ গড়ে তুলতে চাই। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সহজলভ্য করব, ঘর কেনা সহজ করব, পরিবেশ রক্ষা করব, এবং আদিবাসী ও অ-আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ব্যবধান কমাব।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জাতীয় প্রতিশ্রুতি
বিজয় ভাষণে আলবানিজ বলেন, “আমরা একটি সহানুভূতিশীল দেশ গড়ে তুলতে চাই। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সহজলভ্য করব, ঘর কেনা সহজ করব, পরিবেশ রক্ষা করব, এবং আদিবাসী ও অ-আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ব্যবধান কমাব।”
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, “ভয়েস” রেফারেন্ডামের ব্যর্থতা, আবাসন সংকটের সময় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পদ কেনা, এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান আগামীতে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।