মেলবোর্ন, ২৪ মে—মাত্র চার দিনের দাম্পত্য জীবন। স্বপ্নের মতো হানিমুন। আর তারপরই যেন বজ্রাঘাত – স্বামী আত্মহত্যা করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক নববধূর জীবনে এমনই মর্মান্তিক মোড় এসেছে, যা সামাজিক মাধ্যমে কেঁপে উঠেছে লাখো মানুষের হৃদয়।
নর্থ ক্যারোলাইনার সাউদার্ন পাইনস-এর বাসিন্দা ইসাবেল কলস বিয়ে করেন ক্রিস্টোফারকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। ১৮ মাস আগে এক ডেটিং অ্যাপে তাঁদের পরিচয়। সম্পর্ক গড়ে ওঠে খুব দ্রুত, আর তাঁরা একে অপরের প্রেমে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের হানিমুন ছিল নিউ জার্সির অ্যাসবারি পার্কে অনুষ্ঠিত এক সমুদ্রসৈকত সংগীত উৎসব – ‘সী. হিয়ার. নাও ফেস্টিভাল’-এ। ইসাবেল বলেন, “আমরা হানিমুনে ছিলাম প্রচণ্ড খুশি ও প্রেমে পূর্ণ।”
ইসাবেল কলস ও ক্রিস্টোফার তাঁদের হানিমুনে। মাত্র চারদিনের দাম্পত্য জীবনেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই ঘটনা। ছবি: কেনেডি নিউজ
কিন্তু সেই আনন্দ যেন এক দিনে শেষ হয়ে গেল। হানিমুন থেকে ফেরার এক দিন পরই, মাত্র ২৮ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন ক্রিস্টোফার, যিনি একজন সাবেক সেনা সদস্য ছিলেন। তাঁদের বিয়ের বয়স তখন মাত্র চারদিন।
ইসাবেল বলেন, “সকালে সে কাপড় গুছাচ্ছিল, আচরণে একটু অস্বাভাবিকতা ছিল। আমি জিজ্ঞেস করি কী হয়েছে, সে বলে কিছু না। তারপর নিচে নেমে যায়।”
তিনি বলেন, “আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি সে বাইরে চলে যাচ্ছে এবং বনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। আমি দৌড়ে জুতো আনতে যাই, আর ফিরে এসে দেখি সে আর নেই।”
পরদিন সকালে ক্রিস্টোফারের বাবা ছেলেকে মৃত অবস্থায় বনের ভেতরে খুঁজে পান।
ইসাবেল বলেন, “আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। হানিমুনে সে একদম স্বাভাবিক ছিল। আমরা দারুণ সময় কাটিয়েছিলাম।”
তাঁরা কয়েক দিন আগেই কোর্টে বিয়ে করেছিলেন এবং মে মাসে বন্ধু-পরিবারদের নিয়ে বড় অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে, ইসাবেল নিজেকে দোষী মনে করতে থাকেন, কারণ তিনি বুঝতেই পারেননি যে তাঁর স্বামী মানসিকভাবে এতটা বিপর্যস্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী খুবই সফল, পরিশ্রমী এবং ভালো মানুষ ছিল। আমি ভাবি, কোথাও কোনও লক্ষণ ছিল কি? কিন্তু সত্যিই কিছুই বোঝা যায়নি।”
অবাক করার মতো ঘটনা ঘটে তাঁর মৃত্যুর তিন মাস পরে – ভালোবাসা দিবসে ইসাবেল একটি ফুলের তোড়া পান। পরে জানতে পারেন, সেটি ক্রিস্টোফার সেপ্টেম্বরে অর্ডার করে গিয়েছিলেন।
ইসাবেল এই হৃদয়বিদারক গল্প শেয়ার করেন সামাজিক মাধ্যমে, যা প্রায় ৪ কোটি মানুষ দেখে ফেলেছে। যদিও কিছু নেটিজেন তাঁকে দোষারোপও করেছে, এমনকি মৃত্যুর জন্যও দায়ী করেছে।
এখন ইসাবেল মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন এবং ২০২৫ সালের অক্টোবরে শিকাগো ম্যারাথনে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করা একটি সংস্থার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে।
ইসাবেল বলেন, “সবাই একটি ব্যাখ্যা খোঁজে। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করতে চায় না যে একজন মেধাবী, সুদর্শন, সফল মানুষ হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। স্পষ্টতই, সে ভেতরে ভেতরে একা লড়ছিল, যেটা কেউ বুঝতেই পারেনি।”
শেষে তিনি বলেন, “আমার জীবনের একটি অংশ চিরতরে হারিয়ে গেছে। এখনও অনেক কষ্টের সঙ্গে সেই মুহূর্ত বারবার মনে পড়ে। আমি জানি ও আমাকে আঘাত করতে চায়নি। সে হয়তো ভেবেছিল, সবাই তার ছাড়াই ভালো থাকবে।”