মেলবোর্ন, ১ জুন— যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ফিলিস্তিনের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় এক ছাত্রীকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ছাত্রী মেঘা ভেমুরি ২৯ মে, বৃহস্পতিবার সমাবর্তন-পূর্ব এক অনুষ্ঠানে ক্লাস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি প্রতিবাদী ভাষণ দেন।
ভাষণের পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেঘাকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানায় ৩০ মে, শুক্রবারের মূল সমাবর্তনে তিনি এবং তার বাবা-মা নিষিদ্ধ থাকবেন।
‘বোস্টন গ্লোব’ এর বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি শনিবার এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে।
এমআইটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠানো ই-মেইলে ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মেলিসা নোবলস লেখেন, “আপনি সমাবর্তনের আয়োজকদের ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করেছেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রতিবাদ পরিচালনার মাধ্যমে ইউনিভার্সিটির সময়, স্থান ও উপায়সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। যদিও আমরা মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি, এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।”
মেঘা ভেমুরি এমআইটিতে কম্পিউটার সায়েন্স, নিউরোসায়েন্স ও ভাষাবিজ্ঞান (লিঙ্গুইস্টিকস) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জর্জিয়ার আলফারেটা শহরে। ২০২১ সালে আলফারেটা হাই স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি এমআইটিতে ভর্তি হন। তিনি ‘রিটেন রেভল্যুশন’ নামক এমআইটির একটি ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, যা বিপ্লবী চিন্তাধারাকে প্রকাশের সুযোগ দেয়।
ভাষণে মেঘা গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা’ বলে আখ্যা দেন। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে এমআইটির গবেষণা সহযোগিতার তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীই একমাত্র বিদেশি সামরিক বাহিনী, যাদের সঙ্গে এমআইটির গবেষণা সম্পর্ক রয়েছে। এর অর্থ- ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলায় শুধু আমাদের দেশ নয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও সহযোগী ভূমিকা রাখছে।”
মেঘা আরও বলেন, “গত বসন্তে এমআইটির স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এবং গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে বিপুলভাবে ভোট দিয়েছিল। আপনারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন।”
এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা’ ইস্যুতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মেঘার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের মতে- একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর অধিকার ছিল, বিশেষত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে।
তবে এমআইটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে, পূর্বনির্ধারিত বক্তব্য অতিক্রম করে আনুষ্ঠানিক মঞ্চে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া নিয়মবহির্ভূত। ফলে, যদিও মেঘা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন, তবে তার নাম সমাবর্তনের মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চারিত হয়নি।