মেলবোর্ন, ২৭ এপ্রিল – 7 নিউজ আয়োজিত অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনের চূড়ান্ত লিডারস বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও বিরোধী নেতা পিটার ডাটন মুখোমুখি হন। বিতর্ক শেষে ৬০ জন অনির্ধারিত ভোটার নিয়ে গঠিত “জুরি রুম”-এর রায় অনুযায়ী আলবানিজ’ই এই বিতর্কের বিজয়ী, যিনি মোট ভোটের ৫০ শতাংশ পেয়েছেন। ডাটনের পক্ষে গেছে মাত্র ২৫ শতাংশ, এবং বাকি ২৫ শতাংশ ভোটার ছিলেন অনিশ্চিত।
বিষয়ভিত্তিক ফলাফল: কে কোথায় এগিয়ে?
বিতর্কে বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় যে জীবনযাত্রার ব্যয়, কর হ্রাস, এবং আবাসন সংকট বিষয়ে আলবানিজির প্রতি জনসমর্থন তুলনামূলকভাবে বেশি।
- জীবনযাত্রার ব্যয়ে আলবানিজি পেয়েছেন ৬৫ শতাংশ, ডাটন মাত্র ১৬ শতাংশ
- কর হ্রাস ইস্যুতে আলবানিজি পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ডাটন ২১ শতাংশ
- আবাসনে যদিও ব্যবধান কম, তবুও আলবানিজি (৩৫%) ডাটন (৩০%) এর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে
তবে, আদিবাসী বিষয় (Indigenous affairs) নিয়ে আলোচনায় ডাটনের পক্ষে গেছেন ৪৬ শতাংশ, যেখানে আলবানিজির পক্ষে ২৭ শতাংশ।
বিতর্কের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
স্বীকারোক্তি ও জবাবদিহি
আলবানিজকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তার পুরনো উক্তি, “My word is my bond”, যা তিনি স্টেজ ৩ করছাড় না বদলের প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে বলেছিলেন। জবাবে তিনি বলেন, “আমি সিদ্ধান্ত পাল্টেছি কারণ মানুষ কঠিন সময় পার করছিল। আমি লুকাইনি, বরং ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে গিয়ে সিদ্ধান্তের যুক্তি তুলে ধরেছি। কোয়ালিশনও সেটা সমর্থন করেছে।”
ডাটনকেও তার ওয়ার্ক ফ্রম হোম নীতি বদলানো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, “আমরা ভুল করেছিলাম, কিন্তু আমি কর্মক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবিলিটিতে বিশ্বাস করি। তবে, জনগণ প্রত্যাশা করে তাদের করের টাকা কার্যকরভাবে ব্যয় হবে।”
পারমাণবিক শক্তি ও নিরাপত্তা
ডাটন বলেন, তিনি নিজ এলাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও অসুবিধা নেই। তিনি বলেন, “এটা নিরাপদ প্রযুক্তি, এবং আমরা অন্যান্য দেশেও এটা সফলভাবে চলছে।” তবে বিতর্কে ডাটনের একটিও প্রস্তাবিত পারমাণবিক সাইট পরিদর্শনে না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ডাটন সরাসরি চীনকে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেন। আলবানিজ যদিও চীনের প্রভাব বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেন, তবুও সম্পর্কটিকে “জটিল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
‘Welcome to Country’ বিতর্ক
আদিবাসী স্বীকৃতি ও সাংস্কৃতিক সম্মানসূচক অনুষ্ঠান Welcome to Country নিয়ে দুই নেতা তীব্র মতবিরোধে জড়ান। ডাটন বলেন, “এগুলো অতিরিক্তভাবে করা হচ্ছে, যার ফলে মূল উদ্দেশ্য ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সমাজ বিভক্ত হচ্ছে।”
আলবানিজ জবাবে বলেন, “এটি সম্মানের বিষয় এবং আমাদের উচিত এই মহাদেশে সবচেয়ে পুরাতন সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো।”
The Voice প্রসঙ্গে চাপ
আলবানিজিকে প্রশ্ন করা হয় কেন তিনি Voice to Parliament ইস্যু থেকে সরে এসেছেন। তিনি বলেন, “আমি গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।” তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি বলেন, “আমরা মিলিতভাবে মীমাংসার ভিন্ন পথ খুঁজে নিতে চাই।”
চূড়ান্ত মন্তব্য: ভবিষ্যতের আশা বনাম আশঙ্কা
আলবানিজি তার বক্তব্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “আমরা বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল অঞ্চলে বাস করছি, এবং আমাদের বৈচিত্র্যময় সমাজ আমাদের শক্তি।”
ডাটন বলেন, “অস্ট্রেলিয়ানরা আর তিন বছর এই ব্যয়বহুল জীবনযাপন সহ্য করতে পারবে না। আমরা তেল কর ২৫ সেন্ট কমাতে এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে চাই।”
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
অর্থমন্ত্রী জিম চালমার্স বলেন, “এই বিতর্কে প্রমাণিত হয়েছে—আলবানিজ স্থিরতা ও নিশ্চয়তার প্রতীক, আর ডাটন ঝুঁকির নাম।” তিনি ডাটনের যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুকরণের প্রবণতাও সমালোচনা করেন।
সেনেটর জেমস প্যাটারসন, ডাটনের পক্ষ নিয়ে বলেন, “আলবানিজ এর মন্তব্য—ট্রাম্পের ফোন নেই—একটি অদ্ভুত দাবী। তবে ডাটনের ABC ও দ্য গার্ডিয়ানকে ‘hate media’ বলা ছিল রসিকতা।”
সারসংক্ষেপ
এই বিতর্কে উভয় পক্ষই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরেছেন। তবে জনমত জরিপে আলবানিজ বেশ কিছু মূল ইস্যুতে এগিয়ে, বিশেষ করে অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে।
ডাটন কিছু কৌশলগত ইস্যুতে যেমন আদিবাসী বিষয় ও প্রতিরক্ষা নীতিতে সফল হলেও, চূড়ান্ত মূল্যায়নে 7নিউজের “জুরি রুম” বলছে—এই বিতর্কের জয়ী অ্যান্থনি আলবানিজ।
নিউজ বিশ্লেষণ এবং আপডেট প্রদীপ রায়- OTN Bangla