মেলবোর্ন, ২৯ এপ্রিল—সিডনির ওয়েস্টফিল্ড বন্ডাই জাংশন শপিং সেন্টারে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সাথে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আব্দুল শাদাক পাপন (২৭) জামিন পেয়েছেন।
গত ডিসেম্বর ২০২৪-এ গ্রেপ্তারের পর তিন মাস কারাগারে থাকার পর নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ডেবোরাহ সুইনি গত মাসে তাকে কঠোর শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন। শর্তানুযায়ী, পাপনকে প্রতিদিন পুলিশে রিপোর্ট করতে হবে এবং বাড়িতে গৃহবন্দী থাকতে হবে।
জামিনের যুক্তি ও আদালতের শর্ত:
পাপনের পক্ষে তার আইনজীবী যুক্তি দেখান যে, তিনি তার স্ত্রীর ভরণপোষণের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আদালতে পেশকৃত একটি affidavit-এ পাপনের স্ত্রী জানান, স্বামীর কারাবাসের পর তিনি খাদ্য ও ভাড়ার খরচ চালাতে নিজের বিয়ের গহনা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় থাকা তার স্ত্রীর কর্মঘণ্টা সীমিত হওয়ায় আয়ের উৎস কমে গেছে। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারাগারে যাওয়ার আগে পাপন চারটি খণ্ডকালীন চাকরি করে পরিবার চালাতেন।
অভিযোগের বিস্তারিত:
২৭ বছর বয়সী মোঃ “মোহাম্মদ” আব্দুল শাদাক পাপনকে গ্রেফতারের পর ওয়েভার্লি লোকাল কোর্টে জামিন না দিয়ে হেফাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে একটি শিশুর সাথে ইচ্ছাকৃত যৌন স্পর্শের ছয়টি অভিযোগ, গ্রুমিং-এর একটি অভিযোগ এবং ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুর সাথে যৌন মিলনের একটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, কোলস সুপারমার্কেটের কর্মী পাপন কিশোরীটির কাছে গিয়ে সিসিটিভির সামনেই তার প্যান্টের ভেতরে হাত দেয়। পরবর্তীতে কোলস কোম্পানির ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় নিকটবর্তী একটি বাস স্টপ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রথমবার আদালত তাকে জামিন না মঞ্জুর করেন। আদালতে পুলিশি প্রতিবেদন পাঠকালে ম্যাজিস্ট্রেট মাইকেল বার্কো অভিযুক্তের ভিসা মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, “তিনি বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় এখানে রয়েছেন। বাংলাদেশে যেসব কাজ হয়তো গ্রহণযোগ্য, সিডনিতে সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের শপিং সেন্টারে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের সাথে এভাবে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ মেনে নেওয়া যায় না।”
পাপনের লিগ্যাল এইড আইনজীবী জামিনের আবেদন জানিয়ে বলেন, তার স্ত্রী (যিনি তিনিই ছাত্রী) যদি বাড়ি না ফেরেন তবে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারেন। তবে আদালতকে তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম দেওয়া হয়নি বা নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। আদালতে আরও জানানো হয়, পাপন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ায় তার কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।
তবে ম্যাজিস্ট্রেট বার্কো জোর দিয়ে বলেন, তার প্রাথমিক উদ্বেগ নিউ সাউথ ওয়েলসের জনগণের নিরাপত্তা। তিনি বলেন, “আমি নিউ সাউথ ওয়েলসের জনগণ এবং ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর কথা নিয়ে ভাবি। আমরা সবাই চাই আমাদের শপিং সেন্টারে সবাই নিরাপদে ঘুরে বেড়াক।”
গ্রেপ্তারের সময় পরা কোলস পোলো শার্টেই আদালতে হাজির পাপন জামিন প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদ জানান। তাকে জেল হেফাজতে রেখে পরবর্তীতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ডাউনিং সেন্টার লোকাল কোর্টে তার মামলার শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
আদালতের দাখিলকৃত নথি এবং জামিন মঞ্জুর,
আদালতের দাখিলকৃত নথিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কোলস সুপারমার্কেটের কর্মী পাপন তার কর্মবিরতিতে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীটির কাছে গিয়ে তাকে “সুন্দর” বলে প্রশংসা করেন, ম্যাকডোনাল্ডস থেকে পানীয় কিনে দেন এবং তার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য যোগাযোগের তথ্য বিনিময় করেন। এরপর তিনি তাকে একটি বাথরুমে লুকিয়ে যেতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেন। অভিযোগ রয়েছে, পাপন মেয়েটিকে বলেন, “আমি তোমাকে ড্রিঙ্ক কিনে দিয়েছি… পাঁচ মিনিটের জন্য পেতে পারি? আমরা মজা করতে পারি।”
মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলে পাপন তার নিতম্ব স্পর্শ করেন এবং পরিধেয় পোশাকের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে যৌনাঙ্গ স্পর্শ করার চেষ্টা করেন বলে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।
পুলিশের বক্তব্য, শপিং মলে হাঁটার সময় পাপন মেয়েটির মাথায় চুমু দেন, বাম স্তন স্পর্শের চেষ্টা করেন এবং কোমরে হাত রাখেন। এসময় তিনি মেয়েটিকে বলেন, “তুমি কি আমার হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছ? আমি শুধু তোমার সাথে সেক্স করতে চাই,” এবং জোর করে চুম্বনের অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। পাপন পরে তাকে টেক্সট করে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অনুরোধ করেন বলে অভিযোগ।
পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া:
পাপন এখনও অভিযোগগুলোর ব্যাপারে দোষ স্বীকার বা অস্বীকার করেননি। তার পরবর্তী আদালতের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ জুন, ২০২৫। জামিনের শর্তভঙ্গ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হবে বলে আদালত সতর্ক করেছেন।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক:
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যৌন সহিংসতার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিন দেওয়া কি ন্যায়বিচারের সাথে সাংঘর্ষিক? অন্যদিকে, পাপনের সমর্থকরা যুক্তি দিচ্ছেন যে আইন তার সপক্ষে প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত জামিন পাওয়া তার অধিকার।
সূত্র: নাইন নিউজ, নোটিসার নিউজ