মেলবোর্ন –৩মার্চ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন শুল্ক নীতির ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো মিত্র দেশগুলোর ওপরও অন্তত ১০% শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান এবং অস্ট্রেলিয়ার গরুর মাংস রপ্তানির সমালোচনা করেন।
ট্রাম্প তার এই শুল্ক নীতিকে “মুক্তি দিবস” ও “আমেরিকাকে আবার সমৃদ্ধ করুন” অভিযানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে নির্দিষ্ট কিছু দেশের জন্য অতিরিক্ত শুল্কও বিবেচনা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট হার এখনো জানানো না হলেও, তিনি অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংসের ওপর বিশেষ নজর দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “অস্ট্রেলিয়া—যারা খুব ভালো মানুষ, সবদিক দিয়েই চমৎকার—তারা আমেরিকান গরুর মাংস নিষিদ্ধ করে রেখেছে। অথচ গত বছরই আমরা তাদের কাছ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের গরুর মাংস আমদানি করেছি। তারা আমাদের গরুর মাংস নেয় না, কারণ তারা তাদের কৃষকদের রক্ষা করতে চায়। আমি তাদের দোষ দিই না, কিন্তু আজ মধ্যরাত থেকেই তারা একই জিনিসের সম্মুখীন হবে।”
এই শুল্ক নতুন করে মার্কিন সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে (অস্ট্রেলিয়ার সময় বিকাল ৩টা) কার্যকর হবে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল যে, যেসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রাখে, শুধুমাত্র সেসব ১০-১৫টি দেশই এই শুল্কের আওতায় পড়বে। তবে ট্রাম্প রোববার তার বক্তব্যে হালনাগাদ করে বলেন, প্রতিটি দেশকেই নতুন শুল্কের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এর আগে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, অটোমোবাইল শিল্প এবং চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। এবার নতুন করে ওষুধ, মাংস, লাম্বার, তামা ও মাইক্রোচিপের মতো পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপের আলোচনা চলছে।
স্বাধীন অর্থনীতিবিদ সল এসলেক বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার যদি পাল্টা শুল্ক দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে তা হবে “অবিশ্বাস্য রকমের বোকামি”, কারণ এতে স্থানীয় ভোক্তাদের দাম বেশি দিতে হবে। তার মতে, মার্কিন পণ্য এড়ানোর জন্য কুইন্টাস ও ভার্জিনকে এয়ারবাসের বিমান কেনার চাপ দেওয়া, কৃষকদের মার্কিন যন্ত্রপাতি না কেনার পরামর্শ দেওয়া এবং ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে অন্য দেশের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।
রেড মিটের ওপর শুল্ক বাড়লে ম্যাকডোনাল্ডসের মতো প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দাম বাড়তে পারে। রেড মিট অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জন ম্যাককিলপ বলেন, অস্ট্রেলিয়া মূলত ট্রিম করা মাংস রপ্তানি করে, যা বিফ প্যাটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, “এতে মার্কিন ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর লাভবান হবে শুধু মার্কিন গবাদি পশু উৎপাদকরা। অর্থাৎ, এটি আসলে দেশের ভেতরেই সম্পদের পুনর্বণ্টন।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্প এই শুল্ক নীতি নিয়ে গর্বিত, কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা “অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা” বন্ধ করবে এবং আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে।এই সিদ্ধান্তের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।