মেলবোর্ন ১১ এপ্রিল- অস্ট্রেলিয়ায় এক মাসেই প্রায় ১,৯৭,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আগমন করেছে—এমন তথ্য প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (ABS)। এই সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এই তথ্য এমন এক সময়ে উঠে এসেছে যখন দু’দলই অভিবাসন সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে আগত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২০১৯ সালের ১,৮৭,৯০০ জনের রেকর্ড ভেঙে ৭.৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। সাধারণত এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিস্টার ১ শুরু হওয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন বাড়ে।
একই মাসে, অস্ট্রেলিয়ায় মোট ১.৭৯ মিলিয়ন মানুষ প্রবেশ করেছে এবং ১.৪৯ মিলিয়ন দেশ ত্যাগ করেছে। তবে স্বল্পমেয়াদি ভিজিটরদের সংখ্যা ২০২৪ সালের ৮৫৮,০০০ থেকে কমে ৭৮৮,০০০-এ দাঁড়িয়েছে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় বড় রাজনৈতিক দল এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন সীমিত করার প্রস্তাব দিচ্ছে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় বড় রাজনৈতিক দল এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন সীমিত করার প্রস্তাব দিচ্ছে। অপোজিশন লিডার পিটার ডাটন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা বছরে শুধুমাত্র ২,৪০,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণ করবে। তাঁর দাবি, এটি গৃহনির্মাণ সংকট কমাতে সাহায্য করবে। তিনি আরও জানান, “লেবার পার্টির অধীনে অভিবাসন বাড়ায় বাসস্থান, অবকাঠামো ও অন্যান্য সেবায় ব্যাপক চাপ পড়ছে।”
ডাটনের দাবি, গত নির্বাচনের সময় যেখানে ৫২০,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল, তা এখন বেড়ে ৮৫০,০০০-র বেশি হয়েছে। তাঁর প্রস্তাবিত সীমা লেবার সরকারের প্রস্তাবিত ২৭০,০০০ শিক্ষার্থীর চেয়ে ৩০,০০০ কম।
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এর নেতৃত্বাধীন সরকার এর আগে ইংরেজি দক্ষতার শর্ত কঠোর করা এবং ভিসা ফি দ্বিগুণ করে ১,৬০০ ডলার করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিল।
ট্রেজারার জিম চালমার্স বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাতকে সমর্থন করি, তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের আগমন ছিল অভূতপূর্ব। এখন আমরা সেটিকে নিয়ন্ত্রণে এনেছি।”
ইউনিভার্সিটিজ অস্ট্রেলিয়া বলেছে, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বছরে ৫০০ কোটি ডলার অবদান রাখে এবং চাকুরীর বাজারে ২.৫ লাখেরও বেশি চাকুরী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে।
হোম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৫৩,৯০২টি ছাত্র ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ৬০,৪৯২ ও ২০২৩ সালের ৮৬,৫৯০-এর তুলনায় অনেক কম।
অন্যদিকে, হোম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৫৩,৯০২টি ছাত্র ভিসা অনুমোদিত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ৬০,৪৯২ ও ২০২৩ সালের ৮৬,৫৯০-এর তুলনায় অনেক কম।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাসা ভাড়ার সংকটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অযথা দোষারোপ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “তারা এই সংকটের এক ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।”
সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নেট ওভারসিজ মাইগ্রেশন ছিল রেকর্ড ৫৩৬,০০০, যা লেবার ও কোয়ালিশন উভয়কেই তা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করেছে। তবে ২০২৩-২৪ সালে তা কিছুটা কমে ৪৪৬,০০০ হয়েছে, যা এখনও লেবার সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯৫,০০০-র চেয়ে অনেক বেশি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাই এখন সবচেয়ে বড় অভিবাসী গোষ্ঠী, যা মাসিক আগত অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেক—২০৭,০০০ জন।
Institute of Public Affairs (IPA) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে।
IPA-এর সিনিয়র ফেলো ড. কেভিন ইউ বলেন, “ অস্ট্রেলিয়ানরা অবশ্যই জানতে চাইতেই পারেন, বর্তমান অভিবাসন ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নীতি জাতীয় স্বার্থে কতটা উপযোগী।”
তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই অতিথিপরায়ণ দেশ, তবে আমাদের নেতৃত্বকে নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষার্থী গ্রহণের পরিমাণ যেন টেকসই হয় এবং সরকারি অবকাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।”