ABC নিউজের রাজনৈতিক প্রতিবেদক মানি ট্রু-এর প্রতিবেদন অবলম্বনে
মেলবোর্ন, ৪ মে —
মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেল পিটার ডাটনের দুই দশকের রাজনীতির অবসান। ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে, ব্রিসবেনের ডিকসন আসনে তিনি লেবার পার্টির কাছে পরাজিত হন, যা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক তৈরি করেছে—তিনি হলেন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রথম বিরোধীদলীয় নেতা যিনি নিজের আসন হারালেন।
“২৪ বছর একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ করা ছিল এক বিরাট সম্মান। আমি অস্ট্রেলিয়ান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
ডাটন শনিবার রাতে পরাজয় স্বীকার করে বলেন, “২৪ বছর একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ করা ছিল এক বিরাট সম্মান। আমি অস্ট্রেলিয়ান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
পিটার ক্রেইগ ডাটন ১৯৭০ সালে ব্রিসবেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইয়াং লিবারেলস-এ যোগ দেন এবং এরপর ১৯৮৯ সালে কুইন্সল্যান্ডের লাইটন আসনে রাজ্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যদিও পরাজিত হন।

এরপর তিনি কুইন্সল্যান্ড পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন এবং প্রায় এক দশক সেবা দিয়ে ‘ডিটেকটিভ সিনিয়র কনস্টেবল’ পদে অধিষ্ঠিত হন। এক বন্দির সঙ্গে গাড়ি ধাওয়ার সময় আহত হয়ে তিনি ১৯৯৯ সালে পুলিশ বাহিনী ত্যাগ করেন।
২০০১ সালে তিনি ডিকসন আসনে লেবার পার্টির তারকা প্রার্থী চেরিল কেরনটকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদে প্রবেশ করেন। এরপর তার রাজনৈতিক উত্থান ছিল দ্রুত ও ধারাবাহিক। তিনি জন হাওয়ার্ড সরকারের সময় মন্ত্রিত্ব পান এবং পরবর্তীতে অ্যাবট ও মরিসনের অধীনে অভিবাসন, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছিলেন কঠোর অভিবাসন নীতির প্রবক্তা এবং ‘স্টপ দ্য বোটস’ ক্যাম্পেইনের অন্যতম মুখ। তার আমলে ‘আউ পেয়ার ভিসা কেলেঙ্কারি’ ও ‘প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জে জলবায়ু রসিকতা’ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতৃত্বে আসা
২০২২ সালের নির্বাচনে স্কট মরিসনের ব্যাপক পরাজয়ের পর পিটার ডাটন বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন। তখন কোয়ালিশন মাত্র ৫৮টি আসনে গিয়ে ঠেকে, যা ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। মধ্যপন্থীদের অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে আসেন ডাটন, যার কট্টর রক্ষণশীল অবস্থান অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল।
তিনি বলেন, “আমাদের নীতি হবে ‘ভুলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ানদের’ জন্য—যারা পরিশ্রম করে, কিন্তু যাদের কেউ দেখে না।”
২০২৩ সালে, আলবানিজ সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভয়েস টু পার্লামেন্ট’ সংবিধান সংশোধনী রেফারেন্ডাম। ডাটন সরকার বিরোধী অবস্থানে থাকেন এবং ‘না’ পক্ষে প্রচার চালান, যেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়। ডাটনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এটি ছিল বড় একটি কৌশলগত বিজয়।
২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যখন জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে, তখন ডাটন এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং পাবলিক সার্ভিসের খরচ কমানোর পরিকল্পনা ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
নির্বাচনী ব্যর্থতা ও দলীয় সমালোচনা
ডাটনের নির্বাচনী প্রচার শুরু হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, যেখানে তিনি ‘সরকারি দক্ষতা মন্ত্রী’ নামের একটি নতুন পদের ঘোষণা দেন। অনেকেই এটিকে এলন মাস্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের ছায়া বলেই ব্যাখ্যা করেন।
ভোটের দিন দ্রুত ফলাফল জানিয়ে দেয় যে, তার নির্বাচনী কৌশল—‘সাবার্বান ব্যাটলারদের’ টার্গেট করা—কার্যকর হয়নি। লিবারেল পার্টি আবারও গুরুত্বপূর্ণ শহরাঞ্চল ও প্রগতিশীল এলাকাগুলিতে হার মানে।
“এই দলটির নেতৃত্ব দেয়া ছিল আমার জীবনের অন্যতম গর্বের বিষয়। তবে আমরা এই প্রচারণায় ভালো করতে পারিনি, এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।”
শেষ কথা
শনিবার রাতে তিনি বলেন, “এই দলটির নেতৃত্ব দেয়া ছিল আমার জীবনের অন্যতম গর্বের বিষয়। তবে আমরা এই প্রচারণায় ভালো করতে পারিনি, এবং তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।
ডাটনের বিদায় রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগের অবসান, যা অনেক বিতর্ক, কঠোর নীতিমালা, এবং এক বিভাজিত লিবারেল পার্টির পুনর্গঠনের চেষ্টার সাক্ষী হয়ে থাকবে।