মেলবোর্ন, ২২ মে— ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের নাম ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে—ইয়ারন লিসচিনস্কি এবং সারাহ লিন মিলগ্রিম। তারা দুজনেই ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন এবং প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।
ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, নিহত যুবক ইয়ারন সম্প্রতি একটি আংটি কিনেছিলেন এবং আগামী সপ্তাহে জেরুজালেমে সারাহকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
তারা দুজনই আমেরিকান জিউইশ কমিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, যা ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল তরুণ ইহুদি পেশাজীবীদের জন্য একটি ককটেল সন্ধ্যা, যা ডিপ্লোমেটিক সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং গাজায় মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে আয়োজিত।
স্থানীয় সময় রাত ৯:০৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ২:০৫) অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার সময় তারা গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে তারা নিহত হন।
আমেরিকান জিউইশ কমিটির প্রধান নির্বাহী টেড ডয়েচ এই ঘটনাকে “একটি যন্ত্রণাময় মুহূর্ত” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “এই নির্মম সহিংসতার ঘটনায় আমরা শোকাহত। আমরা নিহতদের পরিবার ও ইসরায়েলি জনগণের পাশে আছি। তাদের স্মৃতি যেন আশীর্বাদ হয়ে থাকে।”
ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থিত ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের কর্মীরাও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং একে “অপ্রয়োজনীয়, বেদনাদায়ক সহিংসতা” বলে অভিহিত করেছেন।
এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইসরায়েলের গাজা অভিযানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা তীব্র হয়েছে এবং গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী জানান, তারা হামাসের কাছে আটক বন্দীদের মুক্তির জন্য অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে উন্মুক্ত, তবে গাজায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, গাজায় ১১ সপ্তাহের অবরোধ কিছুটা শিথিল করে ইসরায়েল সম্প্রতি জাতিসংঘের সাহায্যবাহী কয়েক ডজন ট্রাক ঢুকতে দিয়েছে, যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আর এই হামলার জন্য বিশ্ব নেতাদের “বিষাক্ত উসকানিমূলক বক্তব্য”কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “এই হামলা হল ৭ অক্টোবর হামাসের বর্বর আক্রমণের পর থেকে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া ঘৃণার প্রত্যক্ষ ফলাফল।”
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি কূটনৈতিক মিশনগুলো এখন ‘বিরুদ্ধবাদী ও ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসবাদের’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের বক্তব্য এই বিদ্বেষ ছড়াতে সাহায্য করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ঘটনাটি “একটি ঘৃণ্য, ইহুদিবিদ্বেষী অপরাধ” হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারো একে “ইহুদিবিদ্বেষী বর্বরতার জঘন্য কাজ” বলে উল্লেখ করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্জ একে “নিকৃষ্টতম” ঘটনা বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের ধরে নিতে হচ্ছে, ঘটনার পেছনে একটি ইহুদিবিদ্বেষী উদ্দেশ্য ছিল।”
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবারের “সন্ত্রাস ও সহিংসতার দৃশ্যপট” এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমাদের সমাজে ঘৃণা, চরমপন্থা ও ইহুদিবিদ্বেষের কোনো স্থান নেই।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাসও একই বার্তা দিয়েছেন।