মেলবোর্ন ৩ জুন
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং যেন কখনোই নিয়মে বাঁধা থাকেনি। কখনো লেগ স্টাম্পের বাইরে থেকে স্কুপ, কখনো হাঁটতে হাঁটতে মিডউইকেটের ওপারে ছয়। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপে আতঙ্ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপ ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন একা হাতে। যেখানে খোঁড়ানো পায়ে দাঁড়িয়েও মাটি কাঁপিয়েছিলেন।
এমন একজন ক্রিকেটারের মুখে হঠাৎ করে “আমি যেন দলকে পেছনে টেনে ধরছি”— এমন স্বীকারোক্তি অস্বস্তির মতোই চমকে দেয়। আর সেই উপলব্ধি থেকেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ব্যাটে ঝড় তুলতে পারলেও, শরীর আর সেই আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না। সেটাই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ।
সম্প্রতি এক পডকাস্টে আবেগঘন কণ্ঠে বললেন ম্যাক্সওয়েল, “আমি দেখছি, আমার শরীর এখন কন্ডিশনের সঙ্গে ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারছে না। ম্যাচের সময় মাঠে নিজের মান অনুযায়ী পারফর্ম না করতে পারলে নিজেরই খারাপ লাগে। তখন মনে হয়, হয়তো আমি দলকে আটকে দিচ্ছি।”
২০২২ সালে পা ভাঙার যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার রেশ থেকেই আজকের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “ওই ইনজুরির পর আমি সব সময় শতভাগে পৌঁছাতে পারিনি। ওয়ানডে ম্যাচে চাপ অনেক বেশি। আমি বুঝেছি, দীর্ঘ মেয়াদে এই ভার আমি বহন করতে পারব না।
অবসর নেয়ার আগে ১৪৯টি ওয়ানডে খেলেছেন, যেখানে ৩ হাজার ৯৯০ রান করেছেন ৩৩.৮১ গড়ে। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪টি শতক ও ৩৩টি অর্ধশতক। বল হাতে নিয়েছেন ৭৭ উইকেট। আর সেই ইতিহাস গড়া ২০১ রানের ইনিংস তো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসেরই রত্ন।
ম্যাক্সওয়েল এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জাতীয় নির্বাচক জর্জ বেইলির সঙ্গেও বিস্তর আলোচনা করেছেন। তিনি জানালেন, “২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছি। তবে সত্যি বলতে, আমি মনে করি না, তখনও এই ফরম্যাটে ফিট থাকব।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে তিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সরে না দাঁড়ালেও, মূলত এই ফরম্যাটে তাকে দেখা যায় না। মাত্র ৭টি টেস্ট খেলে থেমে আছে তার সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার।
তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলে যাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। গ্লোবাল লিগে খেলার পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়েও এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে খেলে যেতে চান তিনি।
অবসর মানে কি থেমে যাওয়া? গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে হয়তো না। তারা শুধু ভিন্নভাবে ফিরে আসেন। হয়তো কোন একদিন, আবারও শর্ট কভার দিয়ে স্লগ করে ছক্কা হাঁকাতে দেখা যাবে ‘ম্যাড ম্যাক্স’কে। হয়ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চেই।