“All labor that uplifts humanity has dignity and importance and should be undertaken with painstaking excellence.” – Martin Luther King Jr.
আজ ১০ মার্চ। অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি রাজ্য এবং টেরিটরিতে শ্রমিক দিবস। সরকারি ছুটির দিন। বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অর্জন, সংগ্রাম ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি বার্ষিক উৎসব। এই দিনটি শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই আন্দোলনের মূল বার্তা ছিল—আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন এবং আট ঘণ্টা বিশ্রাম। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি মৌলিক দাবি।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে শ্রমিক দিবস পালিত হয় ১ মে তারিখে, যা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামে পরিচিত। তবে কিছু দেশে এই দিনটি ভিন্ন তারিখে পালিত হয়, যা সেই দেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত।
শ্রমিক দিবসের ইতিহাসে মেলবোর্নের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৮৫৬ সালের ২১ এপ্রিল মেলবোর্নে প্রথম আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা মিছিল করে। সেই দিন স্থপতি ও নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্লামেন্ট হাউস পর্যন্ত মিছিল করে তাদের দাবি পেশ করে। তাদের এই সরাসরি আন্দোলন সফল হয় এবং তারা বিশ্বের প্রথম সংগঠিত শ্রমিক গোষ্ঠী হিসেবে আট ঘণ্টা কাজের দিন প্রতিষ্ঠা করে, যা তাদের মজুরি না কমিয়েই অর্জিত হয়।
শ্রমিক দিবস কেবল একটি ছুটির দিন নয়, এটি শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমাজ ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম। তাদের কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়েই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারি।
তবে শ্রমিক দিবসে আমাদের শুধু অতীতের অর্জনকে স্মরণ করলেই চলবে না, বর্তমানের চ্যালেঞ্জগুলোকেও মোকাবিলা করতে হবে। আজও বিশ্বজুড়ে অনেক শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে শ্রমবাজারের অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। অনেক শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, অনেকে অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য আরও গভীর হয়েছে। আমাদের উচিত শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। সরকার, নীতিনির্ধারক ও নাগরিক সমাজের উচিত শ্রমিকদের কল্যাণে সমন্বিতভাবে কাজ করা। শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শ্রমিক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুস্থ, সুন্দর ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। শ্রমিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত ও ন্যায়ভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব। শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা।
সম্পাদকীয় –
প্রদীপ রায়
সম্পাদক- ওটিএন বাংলা
১০ মার্চ ২০২৫